সোমবার, ২৮ Jul ২০২৫, ১০:২০ অপরাহ্ন
আলমগীর আকাশ;
কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি;
গতকয়েকদিন ধরে সেন্টমার্টিনের চারপাশে পানির উচ্চতা অস্বাভাবিক ভাবে ২-৩ ফুট বেড়েছে। ঢেউয়ের তোড়ে দ্বীপের গাছ গাছালী, ঘরবাড়ি সহ রাস্তাঘাটে ভেঙ্গে যাচ্ছে। সেন্টমার্টিনে টেকসই বেড়িবাঁধ সহ দীর্ঘস্হায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে অচিরেই দ্বীপটি বিলীন ও জনমানবশূন্য হয়ে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্হানীয় বাসিন্দা সালাহ উদ্দিন জানান, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যাতায়াত করতে হয় ট্রলার যোগে। ভারী বৃষ্টি ও সাগরে কোনো বৈরী পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বর্ষার মৌসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বেড়ে ২-৩ ফুট উচ্চ মাত্রায়।
কোন টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে সাগরের ঢেউয়ের ধাক্কায় দ্বীপের চারপাশের বসতবাড়ি, গাছপালা, চাষের জমি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ভারী বৃষ্টি বা ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হলে দ্বীপে পানি উঠে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় দ্বীপের বাসিন্দাদের প্রধান আয়ের উৎস। সেন্টমার্টিনের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস পর্যটন ব্যবসা, মাছ ও কৃষি ব্যবসা। উল্লেখ্য, সাগর উত্তাল হলে কমে যায় জেলেদের মাছ আহরণ,পর্যটন মৌসুমে পুরো সময় দ্বীপে পর্যটক না গেলে কমে যায় তাদের আয়। অন্যদিকে সাগরের লবণাক্ত পানি ঢুকে নষ্ট হয় ফসল ও ফসলি জমি। সেই সাথে জলোচ্ছ্বাস হলে টেকনাফ থেকে কিছুদিন কোনো খাদ্যপণ্য দ্বীপে নিতে না পারলে খাবারের সংকট দেখা দেয় পুরো দ্বীপে। সাগর উত্তাল হওয়ায় এখন টেকনাফের সঙ্গে সেন্টমার্টিনের যোগাযোগ ব্যবস্হা বন্ধ রয়েছে। সেন্টমার্টিনের জেলে হামিদ হোসেন বলেন,উত্তাল সাগরের গর্জন এবং বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ছে।সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া এখন আামাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়ছে। পানি দিন দিন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েই চলেছে। দ্বীপ রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসা জরুরী মনে করছি। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য সৈয়দ আলম বলেন, সাগরের পানি দ্বীপের চারপাশ আগের চেয়ে ২-৩ ফুট বেড়েছে। বেড়িবাঁধ স্হাপন বা জিও ব্যাগসহ যে কোনো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে দ্বীপ রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। অন্যথায় দ্বীপটি চিরতরে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ফয়েজুল ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে আজ রোববার পর্যন্ত চারদিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌযান চলাচল বন্ধ। টেকনাফ থেকে ঠিক সময়ে কোনো পণ্য আনতে না পারলে দ্বীপে খাদ্য সংকট তৈরি হয়। বর্তমানে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে আজ চারদিন ধরে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে পারছি না। এতে করে দেড়-দুইশ মানুষ টেকনাফে আটকা পড়েছে। যদি আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, তাহলে নৌযান চলাচল শুরু হবে। তখন আটকেপড়া লোকজন সেন্টমার্টিনে ফিরতে পারবে। এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিনে জোয়ারের পানি বাড়লে দ্বীপের মানুষের সমস্যা হয়। বিশেষ করে গতবছর থেকে সমস্যাটা দেখা দিয়েছে। তবে যতটুকু জেনেছি পানি কিছুটা কমছে। দ্বীপের সমস্যার বিষয় উচ্চপর্যায় অবগত করা হয়েছে। তবে আগামীকাল নৌবাহিনীর একটি জাহাজে সেন্টমার্টিনে খাদ্যপণ্য যাবে।