বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৪:২২ পূর্বাহ্ন
মোঃ সোহরাওয়ার্দী
ব্যুরো প্রধান রাজশাহী
১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকারের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনীর গুলিতে সলঙ্গার হাটে বিলেতি পণ্য বর্জন আন্দোলনের কর্মীসহ সাড়ে চার হাজার সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
ব্রিটিশ শাসনামলে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী অসহযোগ আন্দোলন ও খেলাফত আন্দোলনে জনতা উদ্বেলিত হয়ে বিলেতি পণ্য বর্জন করে স্বদেশি পণ্য ব্যবহারের সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। এমনি একটি আন্দোলনের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে সলঙ্গায়। সে সময় তৎকালীন পাবনা জেলার (বর্তমান সিরাজগঞ্জে) সলঙ্গায় একটি ব্যবসায়িক জনপদ হিসেবে সপ্তাহে দু’দিন হাট বসত। ১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি ছিল বড় হাটবার। মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশের নেতৃত্বে অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনের কর্মীরা হাটে নামেন বিলেতি পণ্য কেনাবেচা বন্ধ করতে। আর এই স্বদেশি আন্দোলনের কর্মীদের রুখতে ছুটে আসেন পাবনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আর এন দাস, জেলা পুলিশ সুপার ও সিরাজগঞ্জ মহকুমা প্রশাসক এস কে সিনহাসহ ৪০ জন সশস্ত্র পুলিশ।
সলঙ্গার গো হাটায় ছিল বিপ্লবী স্বদেশি কর্মীদের অফিস। পুলিশ কংগ্রেস অফিস ঘেরাওপূর্বক গ্রেফতার করে মাওলানা আবদুর রশিদকে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুক্ত করতে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বিদ্রোহে ফেটে পড়ে সলঙ্গার সংগ্রামী জনতা। জনতার ঢল ও আক্রোশ দেখে ম্যাজিস্ট্রেট জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য গুলি চালাতে নির্দেশ দেন। শুরু হয় বুলেট-বৃষ্টি। ৪০টি রাইফেলের মধ্যে মাত্র একটি থেকে কোনো গুলি বের হয়নি। এ রাইফেলটি ছিল একজন বাঙ্গালী পুলিশের। হত্যাকাণ্ডে হতাহতের সরকারি সংখ্যা চার হাজার পাচশত (৪৫০০) দেখানো হলেও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার মতে এর সংখ্যা দশ হাজার (১০০০০) এরও অধিক।
মাওলানা আবদুর রশিদ সলঙ্গা বিদ্রোহের মাধ্যমে উপনিবেশিক শাসনের ভিত নড়িয়ে দিয়েছিলেন। সলঙ্গার রক্তসিক্ত বিদ্রোহ শুধু বাংলার মাটিকে সিক্ত করেনি, সিক্ত করেছে সমগ্র উপমহাদেশ। যে রক্তে ভেজা পিচ্ছিল পথে অহিংস, অসহযোগ আন্দোলনে যা কিছু অর্জিত হয়েছে, তা সলঙ্গা বিদ্রোহেরই ফসল।