শুক্রবার, ০৪ Jul ২০২৫, ১১:৫৪ অপরাহ্ন
নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ
উত্তরের শষ্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ আজও কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। উত্তরের শষ্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ আজও কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। এক সময় ফসলে পানি সেচের যন্ত্র ছিল জাঁত।বর্তমানে গ্রাম গঞ্জের কোথাও আর দেখা মিলে না এক সময়ে চিরচেনা পানি সেচের যন্ত্র জাঁত। কালের বিবর্তনে ‘জাঁত’ শব্দটি এখন শুধু অতীতের গল্প। জমিতে পানি সেচের অন্যতম মাধ্যম ‘জাঁত’ এর অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন নাম থাকলেও উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা একে জাঁত নামেই চেনেন। এক সময় এই জাঁতের ব্যবহার ছিল গ্রাম-বাংলার প্রায় প্রতিটি কৃষকের ঘরে ঘরে। উপজেলার বিভিন্ন প্রবীণ লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অতীতে ফসলি জমিতে পানি সেচের জন্য টিন বা বাঁশের তৈরি সেঁউতি ও কাঠের দোন ব্যবহার করা হতো। নদী, খাল-বিল বা জলাশয় থেকে টিন বা বাঁশের চাটাই দিয়ে তৈরি সেঁউতি দিয়ে পানি সেচ দেওয়া হতো। আর উঁচু-নিচু জমিতে ‘জাঁত’ দিয়ে পানি সেচ দেওয়া হতো। উপজেলার আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের কৃষক মো.আরমান বলেন, ক্রস আকারে দুটি বাঁশের শক্ত খুঁটি মাটিতে পুঁতে এর সঙ্গে লম্বা অন্য একটি বাঁশ বেঁধে দেওয়া হয়। এক অংশে জাঁতের মাথা অন্য অংশে মাটির ভরা (ওজন) তুলে দিয়ে পানিতে চুবিয়ে তুললে একসঙ্গে অনেক পানি উঠে আসে। এভাবে অনবরত পানি সেচ দিলে দ্রুত সেচের কাজ হয়ে যায়। আধুনিক শ্যালো, ডিপ, এলএলপি প্রভৃতি সেচযন্ত্র আসায় জাঁতের ব্যবহার এখন আর নেই। উপজেলা সিংসাড়া গ্রামের কৃষক খোরশেদ আলী বলেন, নদী-নালা ও বিলে একসময় সারা বছর পানি থাকত। এসব নদী-নালা ও বিল থেকে জাঁতের সাহায্যে ফসলের ক্ষেতে পানি দেওয়া হতো। এখন নদী হয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত। ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। উপজেলার দমদমা গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আলহাজ্ব মো.আব্দুল মালেক মোল্লা বলেন, আগেকার দিনে ফসলি জমিতে পানি সেচের জন্য টিন বা বাঁশের তৈরি সেঁউতি ও কাঠের দোন ব্যবহার করা হতো। নদী, খালবিল বা জলাশয় থেকে টিন বা বাঁশের চাটাই দিয়ে তৈরি সেঁউতি দিয়ে পানি সরবরাহ করা হতো। আর উঁচু-নিচু জমিতে পানি সেচ দিতে ‘জাঁত’ ছিল অতুলনীয়। গ্রাম-বাংলার কৃষকের আদি চিন্তা-চেতনার ফল ছিল এ কাঠের জাঁত আবিষ্কার। আম অথবা কাঁঠালজাতীয় গাছের মাঝের অংশের কাঠ কেটে নিয়ে তার মাঝখানে খোদাই করে ড্রেন তৈরি করে পানি সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হতো। কোনো কোনো স্থানে নারিকেল, তাল, জিগা, সুপারি ও পাইন গাছ দিয়েও এ জাঁত তৈরি করা হতো। তবে বর্তমানে কাঠের তক্তা দিয়েও এ দোন তৈরি করা হয়। এতে পানি সেচ দিতে শ্রমিক ছাড়া অন্য কোনো খরচ হয় না। আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, গ্রামবাংলা থেকে হারিয়ে গেছে পুরনো ঐতিহ্য।আধুনিকতার ছোঁয়ায় কৃষি সেচ যন্ত্র এখন ইলেকট্রিক যন্ত্রতে রুপান্তরিত হয়েছে। কৃষির আদি ঐতিহ্য অনেক কৃষক এখনও শখের বসে ধরে রেখেছেন বা শখের বসে বাড়ীতে রেখে দিয়েছেন। বর্তমান প্রজন্ম এইগুলো সেচ যন্ত্র ছবি দেখে চিনে থাকবে আর যাদুঘর এগুলো থাকবে কালের আবর্তে।