সোমবার, ০৭ Jul ২০২৫, ০১:৫২ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
Welcome To Our Website...
সংবাদ শিরোনাম :
প্রশাসনের দরজা সবসময় খোলা থাকবে”—স্বন্দীপ বাসীকে আশ্বস্ত করলেন ইউএনও; এনায়েতপুর থানা শাখার উদ্যোগে ট্রেড ইউনিয়ন সদস্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত ; জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা সন্দ্বীপ শাখার মাসিক সভা অনুষ্ঠিত; পিরোজপুর জেলা প্রেসক্লাবের নবগঠিত পরিচালনা কমিটির পরিচিতি ,আলোচনা ও দু’আ অনুষ্ঠান; নওগাঁয় ব্যাটারিচালিত অটোর দখলে সড়ক, ভোগান্তিতে পথচারীরা; চলে গেলেন বোয়ালমারীর বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ খন্দকার রফিকুল ইসলাম কামাল; রক্তাক্ত জুলাই বিপ্লব ‘২৪’ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত-পঙ্গু ও শহীদের স্মরণে আলোচনা ও দু’আ অনুষ্ঠান ; মঠবাড়ীয়ায় দেশীয় অস্ত্রসহ ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার; নওগাঁর আত্রাইয়ে জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কমিটি গঠন সভাপতি বুলেট সম্পাদক আইয়ুব; তেঁতুলিয়ায় এনটিভির ২৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন; কালের বিবর্তনে ‘‘জাঁত’’ শব্দটি এখন শুধু অতীতের গল্প; বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করলেন মোংলা বন্দর চেয়ারম্যান; কদমতলা ইউনিয়ন বিএনপির  প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন ; নতুন অর্থবছরের প্রথমদিনেই বন্দর জেটিতে চার বিদেশি জাহাজ; মোংলায় বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি বিষয়ে কোস্টগার্ডের কর্মশালা; বেলকুচিতে আম পারতে গিয়ে গাছ থেকে পরেগিয়ে পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যু ; জুলাই ছাএ জনতার আত্মত্যাগে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় – ইলিয়াস হোসেন মাঝি ; শহীদ আবু সাঈদের রুহের মাগফেরাত কামণা মধ্য দিয়েই জুলাই অগ্রযাত্রা শুরু এনসিপি’র; সংখ্যালঘু-সংখ্যাগরিষ্ঠ বিভাজনে জামায়াত বিশ্বাসী নয় -খবিরুল ইসলাম; কালীগঞ্জের কাশীরামে রেকর্ডিয় রাস্তা বাদ দিয়ে ব্যক্তিগত রাস্তা তৈরি করে নদীর বালু বিক্রি;

হাত তুলে দোয়া ও ফরজ নামাজের পর দোয়া;

হাফেজ ক্বারি মোঃ নাঈম হাছান জিহাদি, খতীব কলাবাগান ট্যপাটারি জামে মসজিদ

১. রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক অবশ্যই লজ্জাশীল এবং সম্মানী। বান্দা যখন তাঁর কাছে দুই হাত তুলে দোআ করে, তখন তিনি খালি হাত ফেরত দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ ইমাম হাকেম হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। লা-মাজহাবিদের আলেম আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী এই হাদিসের ব্যাখ্যায় এটিকে সহিহ বলে মেনে নিয়েছেন। অন্যদিকে ইমাম আবু দাউদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই হাদিসটি বর্ণনা করে কোনো মন্তব্য করেননি। এতে বোঝা গেল, হাদিসটি নিঃসন্দেহে সহিহ।

লা-মাজহাবিদের আলেম নাসিরুদ্দীন আলবানী সহিহ ইবনে মাজাহ ও জয়িফ ইবনে মাজাহ নামে দুটি কিতাব লিখেছেন। এতে এই হাদিসটি সহিহ ইবনে মাজাহয় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

লা-মাজহাবিদের আলেম মাওলানা উবাইদুল্লাহ মোবারকপুরী মিশকাত শরিফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে এ হাদিসটিকে সহিহ বলে উল্লেখ করেছেন। এতে বোঝা যায়, হাদিসটি সবার কাছে সহিহ এবং নির্ভরযোগ্য।

এ হাদিসে সুস্পষ্টভাবে দোআর সময় হাত তোলার কথা উল্লেখ রয়েছে, যা কোনো বিশেষ দোআ কিংবা বিশেষ কার্যকারনের সাথে নির্দিষ্ট বা সম্পৃক্ত নয়। বরং সর্বক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য বিধায় ফরজ নামাজের পর দোআতেও এটি প্রযোজ্য।

হজরত ইমাম তিরমিজি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে একটি অধ্যায় লিখেছেন এভাবে- ‘দোয়ার সময় হাত তোলা সম্পর্কীয় হাদিসগুলোর বর্ণনা।’ তিনি এ বিষয়টিকে অধ্যায় নির্ধারণ করাই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, দোয়ার সময় হাত তোলা ইমাম তিরমিজি রহমাতুল্লাহি আলাইহি -এর কাছে হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এতে তিনি একটি হাদিস উল্লেখ করেন-

২. হজরত উমর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়ার সময় হাত উঠালে তা নামানোর আগে চেহারা মোবারকে মুছে নিতেন (জামেয়ে তিরমিজি ২/১৭৬, আল মুজামুল আওসাত লিত্তাবরানি ৫/১৯৭, হাদিস: ৭০৫৩)।

এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম তিরমিজি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, হাদিসটি সহিহ। বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজর আসকালানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হাদিসটি হাসান।

হজরত উমর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণিত, এ হাদিসের মধ্যে স্পষ্টভাবে দোয়ার সময় হাত তোলার কথা উল্লেখ আছে। এতে বোঝা যায়, দোয়ার সময় হাত তোলা নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাত এবং দোয়ার শেষে হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মাসেহ করাও সুন্নাত।

৩. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করার সময় হাতের তালু ওপর দিকে করো। হাতের তালুর উল্টো দিক করে প্রার্থনা করো না। যখন দোয়া করা শেষ হবে, দুই হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মাসেহ করো (আবু দাউদ ৫৫৩, আদ্দাওয়াতুল কবির লিল বায়হাকি, পৃ. ৩৯)।
৪. ইমাম ইবনে মাজাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন এভাবে- হজরত ইবনে আব্বাস কর্তৃক বর্ণিত আবু দাউদ শরিফের উল্লিখিত হাদিস সম্পর্কে লা-মাজহাবি কোনো কোনো আলেম প্রশ্ন তুলেছেন যে ইমাম আবু দাউদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই হাদিসের সনদে একজন বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করেননি। সেজন্য হাদিসটি জয়িফ। এ প্রশ্নের উত্তরে লা-মাজহাবদেরই আলেম মাওলানা শামসুল হক আজিমবাদী আবু দাউদ শরিফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ আইনুল মাবুদে ওই হাদিসের ব্যাখ্যা করেছেন, ইমাম আবু দাউদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি যে বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করেননি, সে বর্ণনাকারীর নাম ইমাম ইবনে মাজাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইবনে মাজাহ শরিফে উল্লেখ করেছেন। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহমাতুল্লাহি আলাইহিও তাঁর কিতাব তাকরিবুত তাহজিবে ওই বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করেছেন। ফলে হাদিসটি জয়িফ বলার কোনো অবকাশ থাকে না।

লা-মাজহাবিদের কোনো আলেমের কথা অনুযায়ী যদি ওই হাদিসটির সনদ জয়িফও ধরে নেওয়া যায়, তখনো আলোচ্য বিষয়ে হাদিসটি দলিল হওয়ার সম্পূর্ণ উপযোগী। কারণ লা-মাজহাবিদের আলেম হাফেজ আব্দুল্লাহ রওপুরী তাঁর একটি ফতোয়ায় লিখেছেন, ‘শরিয়তের বিধান দুই প্রকার। এক. কোনো কিছুকে বৈধ স্বীকৃতি দেওয়া, দুই. অবৈধ বলে স্বীকৃতি দেওয়া।’ প্রথম প্রকারের বিধানের জন্য সহিহ ও জয়িফ হাদিস দুটিই প্রযোজ্য। দ্বিতীয় প্রকারের জন্য শুধু সহিহ হাদিসই প্রযোজ্য।

ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করা প্রথম প্রকারের অন্তর্ভুক্ত, অর্থাৎ এটি একটি জায়েজ কাজ, হারাম কাজ নয়। তাই মাসয়ালাটি প্রমাণিত হওয়ার জন্য সহিহ ও জয়িফ উভয় প্রকারের হাদিসই প্রযোজ্য। এ ছাড়া তিনি এও মেনে নিয়েছেন, ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করা মুস্তাহাব আমল (ফাতাওয়া উলামায়ে আহলে হাদিস ১/২২-১৯৮৭ ইং)।
৫. রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিয়ম ছিল, ‘তিনি যখন হাত উঠিয়ে দোয়া করতেন, তখন নিজের হাত চেহারা মোবারকে ফেরাতেন’ (আবু দাউদ) (হাদিসটি মুহাদ্দিসিনের কাছে গ্রহণযোগ্য)।

৬. মুহাম্মদ ইবনে আবি ইয়াহইয়া বলেন, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু এক ব্যক্তিকে নামাজ থেকে ফারেগ হওয়ার আগে হাত তুলে দোয়া করতে দেখেন। ওই ব্যক্তি নামাজ শেষ করার পর হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু তাঁকে বলেন, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ শেষ করার আগে দোয়ার জন্য হাত ওঠাতেন না (মাজমাউজ যাওয়ায়েদ)।

এ হাদিসটি হাফেজ ইবনে হায়সাম তাবারানির হাওয়ালায় বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘ওয়া রিজালুহুস সেকাত’-এর সব বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।

৭. মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বার এ হাদিসে ফরজ নামাজের পর হাত উঠিয়ে দোয়া করার ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে।
আসওয়াদ আমেরি তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করেছি। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফেরানোর পর পাশ ফেরালেন এবং হাত তুলে দোয়া করলেন (এলাউস সুনান ৩/১৬৪, ফাতাওয়ায়ে নজিরিয়া ২৪৫, ২৬৫, ৩৫২)।

৮. হজরত ফজল ইবনে আব্বাস রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু -এর এই বর্ণনাটি বিভিন্ন হাদিসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, যা থেকে হাত উঠিয়ে দোয়া করা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়।
এ হাদিসে প্রমাণিত হয়, নামাজ একাগ্রতা বা খুশুখুজুর সঙ্গে পড়া এবং এরপর দুই হাত তুলে হাতের তালু চেহারার সামনে রেখে দোয়া করা (তিরমিজি, নাসায়ি)।

মুহাদ্দিসিন ও ফকিহদের দীর্ঘ যাচাই ও আলোচনার পর হাদিসটি নির্ভরযোগ্য বলেই বিবেচিত হয়েছে।

৯. হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি নামাজের পর হাত বিস্তৃত করে এই দোয়া করবে- ‘হে আল্লাহ! যিনি আমার এবং ইবরাহিম, ইসহাক, ইয়াকুব আলাইহিস সালাম -এর খোদা, জিবরাইল, মিকাইল, ইসরাফিল আলাইহিস সালাম -এরও খোদা, আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, আমার দোয়া কবুল করুন। কারণ আমি মুখাপেক্ষী, পেরেশান এবং অপারগ। আমাকে দ্বীনের সঙ্গে হেফাজত করুন, গুনাহ থেকে বাঁচান, অভাব দূর করে দিন। তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর দুই হাতকে খালি ফেরাবেন না (আমলুল ইয়াওমি ওয়াল্লায়লাতি ৪৮, ৪৯, কানজুল উম্মাল ২/৮৪)। এ হাদিসের দুজন বর্ণনাকারী সম্পর্কে কিছু কথা থাকলেও ইবনে মুইন বলেছেন, হাদিসটি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করায় কোনো সমস্যা নেই। একই মন্তব্য করেছেন ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান। সুতরাং হাদিসটি নির্ভরযোগ্য।

১০. ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিতাব আদ্দাওয়াতে ‘বাবু রাফয়িল ইয়াদায়ি ফিদ দোয়া’য় হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণনা করেন- রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করেছেন, দোয়ার মধ্যে উভয় হাত এটুকু উঠিয়েছেন, যাতে তাঁর হাতের পাতার শুভ্রভাগ দেখা গিয়েছে।

এ ছাড়া ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ অধ্যায়ে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু, হজরত আনাস রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণিত দুটি হাদিস উল্লেখ করেছেন। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে- এ তিনটি হাদিসের আলোকে বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি লেখেন, প্রথম হাদিসটি তাঁদের জবাব, যাঁরা বলেন হাত তুলে দোয়া করা শুধু ইসতিস্কার নামাজের জন্যই খাস। দ্বিতীয় হাদিসদ্বয় তাঁদের জবাব, যারা বলেন, ইসতিস্কার দোয়া ছাড়া অন্য কোনো দোয়ায় হাত উঠানো যাবে না (ফতহুল বারি ১১/১১৯)।

এ হাদিসে প্রমাণিত হয়, নামাজ একাগ্রতা বা খুশুখুজুর সঙ্গে পড়া এবং এরপর দুই হাত তুলে হাতের তালু চেহারার সামনে রেখে দোয়া করা (তিরমিজি, নাসায়ি)।

মুহাদ্দিসিন ও ফকিহদের দীর্ঘ যাচাই ও আলোচনার পর হাদিসটি নির্ভরযোগ্য বলেই বিবেচিত হয়েছে।

৯. হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি নামাজের পর হাত বিস্তৃত করে এই দোয়া করবে- ‘হে আল্লাহ! যিনি আমার এবং ইবরাহিম, ইসহাক, ইয়াকুব আলাইহিস সালাম -এর খোদা, জিবরাইল, মিকাইল, ইসরাফিল আলাইহিস সালাম -এরও খোদা, আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, আমার দোয়া কবুল করুন। কারণ আমি মুখাপেক্ষী, পেরেশান এবং অপারগ। আমাকে দ্বীনের সঙ্গে হেফাজত করুন, গুনাহ থেকে বাঁচান, অভাব দূর করে দিন। তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর দুই হাতকে খালি ফেরাবেন না (আমলুল ইয়াওমি ওয়াল্লায়লাতি ৪৮, ৪৯, কানজুল উম্মাল ২/৮৪)। এ হাদিসের দুজন বর্ণনাকারী সম্পর্কে কিছু কথা থাকলেও ইবনে মুইন বলেছেন, হাদিসটি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করায় কোনো সমস্যা নেই। একই মন্তব্য করেছেন ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান। সুতরাং হাদিসটি নির্ভরযোগ্য।

১০. ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিতাব আদ্দাওয়াতে ‘বাবু রাফয়িল ইয়াদায়ি ফিদ দোয়া’য় হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণনা করেন- রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করেছেন, দোয়ার মধ্যে উভয় হাত এটুকু উঠিয়েছেন, যাতে তাঁর হাতের পাতার শুভ্রভাগ দেখা গিয়েছে।

এ ছাড়া ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ অধ্যায়ে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু, হজরত আনাস রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণিত দুটি হাদিস উল্লেখ করেছেন। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে- এ তিনটি হাদিসের আলোকে বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি লেখেন, প্রথম হাদিসটি তাঁদের জবাব, যাঁরা বলেন হাত তুলে দোয়া করা শুধু ইসতিস্কার নামাজের জন্যই খাস। দ্বিতীয় হাদিসদ্বয় তাঁদের জবাব, যারা বলেন, ইসতিস্কার দোয়া ছাড়া অন্য কোনো দোয়ায় হাত উঠানো যাবে না (ফতহুল বারি ১১/১১৯)।
রহমরহমাতুল্লাহি আলাইহি আল আদাবুল মুফরাদ, বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ি ও হাকেমের উদ্ধৃতি দিয়ে আরো কিছু বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। তা থেকে কয়েকটি হাদিস এখানে উল্লেখ করছি।

১১. ‘এরপর তিনি উল্লেখ করেন, এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফর করে এবং খুব পেরেশান ও মলিন বদনে আসমানের দিকে হাত তুলে দোয়া করেন, হে আল্লাহ!… তখন সে ব্যক্তির দোয়া কবুল করা হয় (রাফউল ইয়াদাইন ১৮, সহিহ মুসলিম কিতাবুদ দোয়া)।

১২. রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করার সময় বুক পর্যন্ত হাত তুলতেন এবং দোয়া শেষে হাত মোবারক চেহারায় ফেরাতেন (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ২/২৪৭)।

১৩. ‘নামাজ শেষ করার পর রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের ডান হাত কপালের ওপর ফেরাতেন… (ইবনে সানি ৩৯)।
সিহাহ সিত্তার অনেক হাদিস থেকে এ কথা তো দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন ক্ষেত্রে দোয়ার সময় হাত উঠিয়েছেন এবং হাত মুখে ফিরিয়েছেন।াতুল্লাহি আলাইহি আল আদাবুল মুফরাদ, বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ি ও হাকেমের উদ্ধৃতি দিয়ে আরো কিছু বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। তা থেকে কয়েকটি হাদিস এখানে উল্লেখ করছি।

১১. ‘এরপর তিনি উল্লেখ করেন, এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফর করে এবং খুব পেরেশান ও মলিন বদনে আসমানের দিকে হাত তুলে দোয়া করেন, হে আল্লাহ!… তখন সে ব্যক্তির দোয়া কবুল করা হয় (রাফউল ইয়াদাইন ১৮, সহিহ মুসলিম কিতাবুদ দোয়া)।

১২. রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করার সময় বুক পর্যন্ত হাত তুলতেন এবং দোয়া শেষে হাত মোবারক চেহারায় ফেরাতেন (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ২/২৪৭)।

১৩. ‘নামাজ শেষ করার পর রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের ডান হাত কপালের ওপর ফেরাতেন… (ইবনে সানি ৩৯)।
সিহাহ সিত্তার অনেক হাদিস থেকে এ কথা তো দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন ক্ষেত্রে দোয়ার সময় হাত উঠিয়েছেন এবং হাত মুখে ফিরিয়েছেন।
নামাজের পরে হাত তুলে দোয়া করার আরো কিছু প্রমানাদি:

ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি মুহাজজাবের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘আল মাজমু’ গ্রন্থে দোয়ার মধ্যে হাত উঠানো এবং হাতের তালু মুখে ফেরানোর ব্যাপারে ৩০ টি হাদিস উল্লেখ করেছেন। এরপর তিনি এর বিধান সম্পর্কে মন্তব্য করেন, দোয়ায় হাত উঠানো মুস্তাহাব (আল মাজমু ৪৪৮-৪৫০)।

সব শেষে ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লেখেন, যারা এসব হাদিসকে কোনো সময় বা স্থানের সঙ্গে নির্দিষ্ট করে, তারা বড়ই ভ্রান্তির মধ্যে আছে।

তিনি কিতাবুল আজকারে নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করার বিষয়টি জায়েজ বলে উল্লেখ করেছেন। এবং এর প্রমাণে তিরমিজি শরিফে বর্ণিত হজরত উমর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু -এর বর্ণনা এবং আবু দাউদ শরিফে বর্ণিত হজরত ইবনে আব্বাস রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু -এর হাদিস উল্লেখ করেছেন (কিতাবুল আজকার ২৩৫)।

বিষয়টি নিয়ে হজরত ইবনে হাজার আসকালানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ফতহুল বারি ১১/১১৮ এবং বুলুগুল মুরামে সবিস্তার আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন হাদিস উল্লেখ করে দোয়ায় হাত উঠানো মুস্তাহাব প্রমাণ করেছেন। এই দীর্ঘ আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রমাণ হলো, হাত তুলে দোয়া করা মুস্তাহাব এবং নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করাও উত্তম কাজ।

আল্লাহ সকলকে বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন (আমিন)হাত তুলে দোয়া এবং দোয়া শেষে মুখ মাসেহ সম্পর্কে
কিছু আলোচনা

১. রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক অবশ্যই লজ্জাশীল এবং সম্মানী। বান্দা যখন তাঁর কাছে দুই হাত তুলে দোআ করে, তখন তিনি খালি হাত ফেরত দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ ইমাম হাকেম হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। লা-মাজহাবিদের আলেম আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী এই হাদিসের ব্যাখ্যায় এটিকে সহিহ বলে মেনে নিয়েছেন। অন্যদিকে ইমাম আবু দাউদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই হাদিসটি বর্ণনা করে কোনো মন্তব্য করেননি। এতে বোঝা গেল, হাদিসটি নিঃসন্দেহে সহিহ।

লা-মাজহাবিদের আলেম নাসিরুদ্দীন আলবানী সহিহ ইবনে মাজাহ ও জয়িফ ইবনে মাজাহ নামে দুটি কিতাব লিখেছেন। এতে এই হাদিসটি সহিহ ইবনে মাজাহয় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

লা-মাজহাবিদের আলেম মাওলানা উবাইদুল্লাহ মোবারকপুরী মিশকাত শরিফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে এ হাদিসটিকে সহিহ বলে উল্লেখ করেছেন। এতে বোঝা যায়, হাদিসটি সবার কাছে সহিহ এবং নির্ভরযোগ্য।

এ হাদিসে সুস্পষ্টভাবে দোআর সময় হাত তোলার কথা উল্লেখ রয়েছে, যা কোনো বিশেষ দোআ কিংবা বিশেষ কার্যকারনের সাথে নির্দিষ্ট বা সম্পৃক্ত নয়। বরং সর্বক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য বিধায় ফরজ নামাজের পর দোআতেও এটি প্রযোজ্য।

হজরত ইমাম তিরমিজি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে একটি অধ্যায় লিখেছেন এভাবে- ‘দোয়ার সময় হাত তোলা সম্পর্কীয় হাদিসগুলোর বর্ণনা।’ তিনি এ বিষয়টিকে অধ্যায় নির্ধারণ করাই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, দোয়ার সময় হাত তোলা ইমাম তিরমিজি রহমাতুল্লাহি আলাইহি -এর কাছে হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এতে তিনি একটি হাদিস উল্লেখ করেন-

২. হজরত উমর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়ার সময় হাত উঠালে তা নামানোর আগে চেহারা মোবারকে মুছে নিতেন (জামেয়ে তিরমিজি ২/১৭৬, আল মুজামুল আওসাত লিত্তাবরানি ৫/১৯৭, হাদিস: ৭০৫৩)।

এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম তিরমিজি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, হাদিসটি সহিহ। বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজর আসকালানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হাদিসটি হাসান।

হজরত উমর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণিত, এ হাদিসের মধ্যে স্পষ্টভাবে দোয়ার সময় হাত তোলার কথা উল্লেখ আছে। এতে বোঝা যায়, দোয়ার সময় হাত তোলা নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাত এবং দোয়ার শেষে হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মাসেহ করাও সুন্নাত।

৩. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করার সময় হাতের তালু ওপর দিকে করো। হাতের তালুর উল্টো দিক করে প্রার্থনা করো না। যখন দোয়া করা শেষ হবে, দুই হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মাসেহ করো (আবু দাউদ ৫৫৩, আদ্দাওয়াতুল কবির লিল বায়হাকি, পৃ. ৩৯)।
৪. ইমাম ইবনে মাজাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন এভাবে- হজরত ইবনে আব্বাস কর্তৃক বর্ণিত আবু দাউদ শরিফের উল্লিখিত হাদিস সম্পর্কে লা-মাজহাবি কোনো কোনো আলেম প্রশ্ন তুলেছেন যে ইমাম আবু দাউদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই হাদিসের সনদে একজন বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করেননি। সেজন্য হাদিসটি জয়িফ। এ প্রশ্নের উত্তরে লা-মাজহাবদেরই আলেম মাওলানা শামসুল হক আজিমবাদী আবু দাউদ শরিফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ আইনুল মাবুদে ওই হাদিসের ব্যাখ্যা করেছেন, ইমাম আবু দাউদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি যে বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করেননি, সে বর্ণনাকারীর নাম ইমাম ইবনে মাজাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইবনে মাজাহ শরিফে উল্লেখ করেছেন। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহমাতুল্লাহি আলাইহিও তাঁর কিতাব তাকরিবুত তাহজিবে ওই বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করেছেন। ফলে হাদিসটি জয়িফ বলার কোনো অবকাশ থাকে না।

লা-মাজহাবিদের কোনো আলেমের কথা অনুযায়ী যদি ওই হাদিসটির সনদ জয়িফও ধরে নেওয়া যায়, তখনো আলোচ্য বিষয়ে হাদিসটি দলিল হওয়ার সম্পূর্ণ উপযোগী। কারণ লা-মাজহাবিদের আলেম হাফেজ আব্দুল্লাহ রওপুরী তাঁর একটি ফতোয়ায় লিখেছেন, ‘শরিয়তের বিধান দুই প্রকার। এক. কোনো কিছুকে বৈধ স্বীকৃতি দেওয়া, দুই. অবৈধ বলে স্বীকৃতি দেওয়া।’ প্রথম প্রকারের বিধানের জন্য সহিহ ও জয়িফ হাদিস দুটিই প্রযোজ্য। দ্বিতীয় প্রকারের জন্য শুধু সহিহ হাদিসই প্রযোজ্য।

ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করা প্রথম প্রকারের অন্তর্ভুক্ত, অর্থাৎ এটি একটি জায়েজ কাজ, হারাম কাজ নয়। তাই মাসয়ালাটি প্রমাণিত হওয়ার জন্য সহিহ ও জয়িফ উভয় প্রকারের হাদিসই প্রযোজ্য। এ ছাড়া তিনি এও মেনে নিয়েছেন, ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করা মুস্তাহাব আমল (ফাতাওয়া উলামায়ে আহলে হাদিস ১/২২-১৯৮৭ ইং)।
৫. রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিয়ম ছিল, ‘তিনি যখন হাত উঠিয়ে দোয়া করতেন, তখন নিজের হাত চেহারা মোবারকে ফেরাতেন’ (আবু দাউদ) (হাদিসটি মুহাদ্দিসিনের কাছে গ্রহণযোগ্য)।

৬. মুহাম্মদ ইবনে আবি ইয়াহইয়া বলেন, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু এক ব্যক্তিকে নামাজ থেকে ফারেগ হওয়ার আগে হাত তুলে দোয়া করতে দেখেন। ওই ব্যক্তি নামাজ শেষ করার পর হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু তাঁকে বলেন, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ শেষ করার আগে দোয়ার জন্য হাত ওঠাতেন না (মাজমাউজ যাওয়ায়েদ)।

এ হাদিসটি হাফেজ ইবনে হায়সাম তাবারানির হাওয়ালায় বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘ওয়া রিজালুহুস সেকাত’-এর সব বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।

৭. মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বার এ হাদিসে ফরজ নামাজের পর হাত উঠিয়ে দোয়া করার ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে।
আসওয়াদ আমেরি তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করেছি। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফেরানোর পর পাশ ফেরালেন এবং হাত তুলে দোয়া করলেন (এলাউস সুনান ৩/১৬৪, ফাতাওয়ায়ে নজিরিয়া ২৪৫, ২৬৫, ৩৫২)।

৮. হজরত ফজল ইবনে আব্বাস রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু -এর এই বর্ণনাটি বিভিন্ন হাদিসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, যা থেকে হাত উঠিয়ে দোয়া করা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়।
এ হাদিসে প্রমাণিত হয়, নামাজ একাগ্রতা বা খুশুখুজুর সঙ্গে পড়া এবং এরপর দুই হাত তুলে হাতের তালু চেহারার সামনে রেখে দোয়া করা (তিরমিজি, নাসায়ি)।

মুহাদ্দিসিন ও ফকিহদের দীর্ঘ যাচাই ও আলোচনার পর হাদিসটি নির্ভরযোগ্য বলেই বিবেচিত হয়েছে।

৯. হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি নামাজের পর হাত বিস্তৃত করে এই দোয়া করবে- ‘হে আল্লাহ! যিনি আমার এবং ইবরাহিম, ইসহাক, ইয়াকুব আলাইহিস সালাম -এর খোদা, জিবরাইল, মিকাইল, ইসরাফিল আলাইহিস সালাম -এরও খোদা, আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, আমার দোয়া কবুল করুন। কারণ আমি মুখাপেক্ষী, পেরেশান এবং অপারগ। আমাকে দ্বীনের সঙ্গে হেফাজত করুন, গুনাহ থেকে বাঁচান, অভাব দূর করে দিন। তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর দুই হাতকে খালি ফেরাবেন না (আমলুল ইয়াওমি ওয়াল্লায়লাতি ৪৮, ৪৯, কানজুল উম্মাল ২/৮৪)। এ হাদিসের দুজন বর্ণনাকারী সম্পর্কে কিছু কথা থাকলেও ইবনে মুইন বলেছেন, হাদিসটি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করায় কোনো সমস্যা নেই। একই মন্তব্য করেছেন ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান। সুতরাং হাদিসটি নির্ভরযোগ্য।

১০. ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিতাব আদ্দাওয়াতে ‘বাবু রাফয়িল ইয়াদায়ি ফিদ দোয়া’য় হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণনা করেন- রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করেছেন, দোয়ার মধ্যে উভয় হাত এটুকু উঠিয়েছেন, যাতে তাঁর হাতের পাতার শুভ্রভাগ দেখা গিয়েছে।

এ ছাড়া ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ অধ্যায়ে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু, হজরত আনাস রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণিত দুটি হাদিস উল্লেখ করেছেন। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে- এ তিনটি হাদিসের আলোকে বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি লেখেন, প্রথম হাদিসটি তাঁদের জবাব, যাঁরা বলেন হাত তুলে দোয়া করা শুধু ইসতিস্কার নামাজের জন্যই খাস। দ্বিতীয় হাদিসদ্বয় তাঁদের জবাব, যারা বলেন, ইসতিস্কার দোয়া ছাড়া অন্য কোনো দোয়ায় হাত উঠানো যাবে না (ফতহুল বারি ১১/১১৯)।

এ হাদিসে প্রমাণিত হয়, নামাজ একাগ্রতা বা খুশুখুজুর সঙ্গে পড়া এবং এরপর দুই হাত তুলে হাতের তালু চেহারার সামনে রেখে দোয়া করা (তিরমিজি, নাসায়ি)।

মুহাদ্দিসিন ও ফকিহদের দীর্ঘ যাচাই ও আলোচনার পর হাদিসটি নির্ভরযোগ্য বলেই বিবেচিত হয়েছে।

৯. হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি নামাজের পর হাত বিস্তৃত করে এই দোয়া করবে- ‘হে আল্লাহ! যিনি আমার এবং ইবরাহিম, ইসহাক, ইয়াকুব আলাইহিস সালাম -এর খোদা, জিবরাইল, মিকাইল, ইসরাফিল আলাইহিস সালাম -এরও খোদা, আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, আমার দোয়া কবুল করুন। কারণ আমি মুখাপেক্ষী, পেরেশান এবং অপারগ। আমাকে দ্বীনের সঙ্গে হেফাজত করুন, গুনাহ থেকে বাঁচান, অভাব দূর করে দিন। তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর দুই হাতকে খালি ফেরাবেন না (আমলুল ইয়াওমি ওয়াল্লায়লাতি ৪৮, ৪৯, কানজুল উম্মাল ২/৮৪)। এ হাদিসের দুজন বর্ণনাকারী সম্পর্কে কিছু কথা থাকলেও ইবনে মুইন বলেছেন, হাদিসটি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করায় কোনো সমস্যা নেই। একই মন্তব্য করেছেন ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান। সুতরাং হাদিসটি নির্ভরযোগ্য।

১০. ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিতাব আদ্দাওয়াতে ‘বাবু রাফয়িল ইয়াদায়ি ফিদ দোয়া’য় হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণনা করেন- রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করেছেন, দোয়ার মধ্যে উভয় হাত এটুকু উঠিয়েছেন, যাতে তাঁর হাতের পাতার শুভ্রভাগ দেখা গিয়েছে।

এ ছাড়া ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ অধ্যায়ে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু, হজরত আনাস রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু সূত্রে বর্ণিত দুটি হাদিস উল্লেখ করেছেন। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে- এ তিনটি হাদিসের আলোকে বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি লেখেন, প্রথম হাদিসটি তাঁদের জবাব, যাঁরা বলেন হাত তুলে দোয়া করা শুধু ইসতিস্কার নামাজের জন্যই খাস। দ্বিতীয় হাদিসদ্বয় তাঁদের জবাব, যারা বলেন, ইসতিস্কার দোয়া ছাড়া অন্য কোনো দোয়ায় হাত উঠানো যাবে না (ফতহুল বারি ১১/১১৯)।
রহমরহমাতুল্লাহি আলাইহি আল আদাবুল মুফরাদ, বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ি ও হাকেমের উদ্ধৃতি দিয়ে আরো কিছু বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। তা থেকে কয়েকটি হাদিস এখানে উল্লেখ করছি।

১১. ‘এরপর তিনি উল্লেখ করেন, এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফর করে এবং খুব পেরেশান ও মলিন বদনে আসমানের দিকে হাত তুলে দোয়া করেন, হে আল্লাহ!… তখন সে ব্যক্তির দোয়া কবুল করা হয় (রাফউল ইয়াদাইন ১৮, সহিহ মুসলিম কিতাবুদ দোয়া)।

১২. রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করার সময় বুক পর্যন্ত হাত তুলতেন এবং দোয়া শেষে হাত মোবারক চেহারায় ফেরাতেন (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ২/২৪৭)।

১৩. ‘নামাজ শেষ করার পর রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের ডান হাত কপালের ওপর ফেরাতেন… (ইবনে সানি ৩৯)।
সিহাহ সিত্তার অনেক হাদিস থেকে এ কথা তো দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন ক্ষেত্রে দোয়ার সময় হাত উঠিয়েছেন এবং হাত মুখে ফিরিয়েছেন।াতুল্লাহি আলাইহি আল আদাবুল মুফরাদ, বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ি ও হাকেমের উদ্ধৃতি দিয়ে আরো কিছু বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। তা থেকে কয়েকটি হাদিস এখানে উল্লেখ করছি।

১১. ‘এরপর তিনি উল্লেখ করেন, এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফর করে এবং খুব পেরেশান ও মলিন বদনে আসমানের দিকে হাত তুলে দোয়া করেন, হে আল্লাহ!… তখন সে ব্যক্তির দোয়া কবুল করা হয় (রাফউল ইয়াদাইন ১৮, সহিহ মুসলিম কিতাবুদ দোয়া)।

১২. রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করার সময় বুক পর্যন্ত হাত তুলতেন এবং দোয়া শেষে হাত মোবারক চেহারায় ফেরাতেন (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ২/২৪৭)।

১৩. ‘নামাজ শেষ করার পর রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের ডান হাত কপালের ওপর ফেরাতেন… (ইবনে সানি ৩৯)।
সিহাহ সিত্তার অনেক হাদিস থেকে এ কথা তো দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন ক্ষেত্রে দোয়ার সময় হাত উঠিয়েছেন এবং হাত মুখে ফিরিয়েছেন।
নামাজের পরে হাত তুলে দোয়া করার আরো কিছু প্রমানাদি:

ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি মুহাজজাবের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘আল মাজমু’ গ্রন্থে দোয়ার মধ্যে হাত উঠানো এবং হাতের তালু মুখে ফেরানোর ব্যাপারে ৩০ টি হাদিস উল্লেখ করেছেন। এরপর তিনি এর বিধান সম্পর্কে মন্তব্য করেন, দোয়ায় হাত উঠানো মুস্তাহাব (আল মাজমু ৪৪৮-৪৫০)।

সব শেষে ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লেখেন, যারা এসব হাদিসকে কোনো সময় বা স্থানের সঙ্গে নির্দিষ্ট করে, তারা বড়ই ভ্রান্তির মধ্যে আছে।

তিনি কিতাবুল আজকারে নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করার বিষয়টি জায়েজ বলে উল্লেখ করেছেন। এবং এর প্রমাণে তিরমিজি শরিফে বর্ণিত হজরত উমর রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু -এর বর্ণনা এবং আবু দাউদ শরিফে বর্ণিত হজরত ইবনে আব্বাস রাদিঅআল্লাহু তাআ’লা আনহু -এর হাদিস উল্লেখ করেছেন (কিতাবুল আজকার ২৩৫)।

বিষয়টি নিয়ে হজরত ইবনে হাজার আসকালানি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ফতহুল বারি ১১/১১৮ এবং বুলুগুল মুরামে সবিস্তার আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন হাদিস উল্লেখ করে দোয়ায় হাত উঠানো মুস্তাহাব প্রমাণ করেছেন। এই দীর্ঘ আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রমাণ হলো, হাত তুলে দোয়া করা মুস্তাহাব এবং নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করাও উত্তম কাজ।

আল্লাহ সকলকে বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন (আমিন)

সংবাদটি শেয়ার করুন :

Copyright © Frilix Group
প্রযুক্তি সহায়তায় মাল্টিকেয়ার